ঢাকা , শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫ , ৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ৫ চেয়ারম্যানের ছেলেসহ হ্যাকার চক্রের তিন সদস্য গ্রেফতার সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভবদহে খনন শুরু রাতে বাসরঘরে, সকালে আখক্ষেতে মিলল বরের লাশ ভবন মালিককে বিদ্যুৎ বিভাগের নোটিশ গাড়িচালকরা দেশের অন্যতম দক্ষ জনশক্তি-শ্রম সংস্কার কমিশন প্রধান আমি পক্ষপাতদুষ্ট চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে অভ্যস্ত নই-জ্বালানি উপদেষ্টা ফ্লাইট ওড়ার আগেই স্থগিত হলো কক্সবাজার ‘আন্তর্জাতিক’ বিমানবন্দর বড় পরিবর্তনের আভাস অন্তর্বর্তী সরকারে যাত্রাবাড়ীতে সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় লন্ড্রি দোকান কর্মচারী নিহত মনোরেল চালু হলে চট্টগ্রামবাসী আরামদায়ক যাতায়াতের সুযোগ পাবে- চসিক মেয়র ৯ কোটি টাকা জালিয়াতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন চলবে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত রেকর্ড ছাড়িয়েছে খেলাপি ঋণ লিবিয়া থেকে ফিরলেন ৩০৯ বাংলাদেশি অসংক্রামক ব্যাধিতে নিঃস্ব মানুষ পাঁচ দফা দাবিতে ফার্মগেটে সড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের যুবলীগ নেতা সম্রাটকে রোববারের মধ্যে আদালতে হাজিরের নির্দেশ ৮ দফা দাবিতে আজ ‘ঢাকা সমাবেশ’ সাগর-রুনির তদন্ত নিয়ে চরম অসন্তোষ সর্বশেষ ৬ মাস সময় দিলেন হাইকোর্ট
* দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসায় ভাঙতে হচ্ছে জমানো শেষ সম্বল * বছরের পর বছর ঘুরতে হচ্ছে হাসপাতালে * হৃদরোগ, ক্যানসার ও ডায়াবেটিস বর্তমানে বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান কারণ

অসংক্রামক ব্যাধিতে নিঃস্ব মানুষ

  • আপলোড সময় : ২৪-১০-২০২৫ ১০:০২:৫০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৪-১০-২০২৫ ১০:০২:৫০ অপরাহ্ন
অসংক্রামক ব্যাধিতে নিঃস্ব মানুষ
হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ, ক্যানসার ও ডায়াবেটিসসহ অসংক্রামক রোগগুলো বর্তমানে বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান কারণ। বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে এসব রোগে ধুঁকে ধুঁকে মরছেন মানুষ। দিনের পর দিন থেরাপি আর টেস্ট করতে করতে ব্যয় হয়ে যায় জীবনের সব সঞ্চয়। বহু মানুষের ভিটামাটিও বিক্রি করতে হয়। বছরের পর বছর স্মরণাপন্ন হতে হয় চিকিৎসকের, দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় হাসপাতালের। সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার খরচ সামান্য কম হলেও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রীতিমতো নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট বলছে, হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ, ক্যানসার ও ডায়াবেটিসসহ অসংক্রামক রোগগুলো বর্তমানে বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান কারণ। ২০২১ সালে এসব রোগে অন্তত চার কোটি ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে এক কোটি ৮০ লাখের বয়স ছিল ৭০ বছরের নিচে। এই অকাল মৃত্যুর ৮২ শতাংশ ঘটেছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। একই সঙ্গে, বিশ্বব্যাপী এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষ কোনো না কোনো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। এসব রোগ সমাধানে প্রথমত প্রতিরোধে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি আক্রান্তদের চিকিৎসা ব্যয় সরবরাহ স্বাভাবিক করতে স্বাস্থ্য বিমা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন। ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, অসংক্রামক ব্যাধি এমন রোগ, যা সংক্রমণ ছাড়াই হয় এবং একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায় না। এর মধ্যে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ, মানসিক রোগ অন্যতম। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭০ শতাংশ মৃত্যুর পেছনে দায়ী এই অসংক্রামক ব্যাধিগুলো, বিশেষত নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে এর প্রকোপ ভয়াবহভাবে বাড়ছে। তিনি বলেন, এই রোগগুলোর মূল কারণÑ অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, কায়িক পরিশ্রমের অভাব, অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান-মাদক সেবন, অতিরিক্ত লবণ ও চিনি গ্রহণ, বায়ুদূষণ, প্রযুক্তির অপব্যবহার, মানসিক চাপ ও সচেতনতার ঘাটতি। এছাড়া জেনেটিক বা পারিবারিক ইতিহাসও একটি বড় কারণ। ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, প্রতিরোধে করণীয় হলো- নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ, ওজন নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান ও মাদক থেকে দূরে থাকা, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি। সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকেও এ বিষয়ে সচেষ্ট হতে হবে। কারণ, একবার আক্রান্ত হলে এসব রোগ আজীবনের সঙ্গী হয়ে ওঠে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়। এসব রোগে আক্রান্তরা চিকিৎসা করতে গিয়ে বিরাট আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। বিশেষ করে, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত নিঃস্ব হয়ে যায়। অন্তত স্বাস্থ্য বিমা করলে কিছুটা সহায় হতে পারে। এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, এই রোগগুলো একবার হলে সারানো কঠিন, কিন্তু প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য রাষ্ট্রকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে হবে। সারাদেশে শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়ামকে উৎসাহিত করতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। যদি প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ফিজিক্যাল ট্রেনার নিয়োগ দেওয়া যায়, তাহলে জনগণ নিয়মিত ব্যায়ামে অভ্যস্ত হবেÑ নতুন ডায়াবেটিস বা হৃদরোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশে একটি ক্যানসার হাসপাতাল দিয়ে চলবে না। প্রতিটি বিভাগে একটি করে ক্যানসার হাসপাতাল থাকা জরুরি। তিনি চিকিৎসার মানোন্নয়ন ও সহজলভ্যতার ওপর জোর দিয়ে বলেন, এখন অনেক আধুনিক চিকিৎসা এসেছে, কিন্তু সেগুলোর খরচ এত বেশি যে মানুষ ফতুর হয়ে যায়। সরকার যদি আধুনিক ও কার্যকর চিকিৎসাসেবা সরকারি ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করে, তাহলে জনগণ বিপর্যয়কর স্বাস্থ্য ব্যয় থেকে রক্ষা পাবে। রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের দিকটি স্পষ্ট করে তিনি বলেন, অসংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধে যেমন সচেতনতা ও জীবনধারা পরিবর্তনের উদ্যোগ নিতে হবে, তেমনি চিকিৎসার সুযোগও বাড়াতে হবে। প্রতিটি জেলায় উন্নত হৃদরোগ চিকিৎসা যেমন রিং স্থাপনের সুযোগ নিশ্চিত করা গেলে, মানুষ অক্ষম না হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। তাই প্রতিরোধ ও চিকিৎসাÑ এই দুই দিকেই রাষ্ট্রকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে, যাতে মানুষ সুস্থও থাকে, সম্পদও টিকে থাকে।
শাকিলা আক্তার নামে এক রোগী জানান, চলতি বছরের মার্চে অনুভব করেন বুকে চিন চিন ব্যথা হচ্ছে। মাঝে মধ্যে অক্সিজেন স্বল্পতা বা শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। সন্দেহবশত এসেছেন জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে। নানা ধরনের টেস্ট শেষে ধরা পড়ে তার হার্টের ভাল্ব নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিস্থাপন করতে হবে। কিন্তু তিনি অপারেশনের জন্য ফিট নন। কারণ তার হার্টরেট অস্বাভাবিক রকম কম (এলভিইএফ-৩২)। দীর্ঘ আট মাসের চিকিৎসায় সেটা বাড়ানো যাচ্ছে না। বরং কমছে। রাজধানীর হৃদরোগ হাসপাতাল, হার্ট ফাউন্ডেশন, কল্যাণপুরের আরেকটি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসকরা তার এই জটিল অপারেশনের জন্য প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যয়ের কথা বলেন। তারপরও সফল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম স্বামীও তাকে নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে দিশাহারা। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। একই অবস্থা বেসরকারি চাকরিজীবী রায়হানেরও। চার মাস আগে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক নিয়ে আসছিলেন হৃদরোগ হাসপাতালে। পরীক্ষা করে ধরা পড়েছে তার তিনটি রিং পরাতে হবে। আর্থিক অসংগতির জন্য তাৎক্ষণিক রিং পরানো সম্ভব হয়নি। পরে প্রস্তুতি নিয়ে এসে দেখা যায়, তার হার্টের পাম্পিং রেট কম। রক্ত জমাট বেঁধে আছে। এটা ঠিক করার জন্য ওষুধ দিয়েছেন চিকিৎসক। ঠিক হলে রিং পরানো হবে। সেখানে তার খরচ প্রায় চার লাখ টাকা। তিনিও অর্থের জোগাড় করতে গিয়ে দিশাহারা।
অসংক্রামক ব্যাধি ও চিকিৎসা ব্যবস্থা বিষয়ে সরকারের স্বাস্থ্য সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। আমরা এ বিষয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করছি। ইতোমধ্যে একাধিক সভা হয়েছে। আমরা অসংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধে একটি কৌশলপত্র তৈরিতে কাজ করছি। আশা করি, আমরা ভালো কিছু করতে পারবো। সরকারি উদ্যোগে অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে ‘রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০২৫’ বাস্তবায়ন, আন্তঃমন্ত্রণালয় সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনসিডি কর্নার স্থাপন করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রোগ শনাক্তকরণ ও ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স